আজকাল পেটের মেদ প্রায় সবার জন্য একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পেটের মেদ কমাতে অনেকেই জিম করা, হাঁটা, সাঁতার কিংবা অনেক দামি কোনও ওষুধও ব্যবহার করছেন । কিন্তু দিন শেষে হয়তো হতাশ হওয়া ছাড়া তেমন কোনও ফলাফল পাচ্ছেন না।
সকালে উঠে প্যান্ট টাইট লাগে, আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ হয়—এই দৃশ্যটা অনেকেরই পরিচিত। পেটের মেদ কমাতে নানা পদের নিয়ম কানুন শুনে অনেকে হাঁপিয়ে ওঠেন। কিন্তু বাস্তব হলো, পেটের মেদ কমাতে সবচেয়ে বড় ধাপ শুরু হয় আমাদের প্লেট থেকেই। মানে, কী খাচ্ছি আর কী খাচ্ছি না, সেটাই আসল চাবিকাঠি।
চলুন জেনে নিই এমন ৬টি খাবারের কথা, যেগুলো আজ থেকেই বাদ দিলে আপনি সহজেই পেটের মেদ কমাতে পারবেন।
পেটের মেদ কমাতে যে খাবারগুলো বাদ দেবেন
কোমল পানীয়
এইসব পানীয় দেখতে রঙিন, খেতে মজাদার, কিন্তু ভেতরে থাকে মারাত্মক পরিমাণে লুকানো চিনি। এক ক্যান কোমল পানীয় মানেই শরীরে ঢুকছে একগাদা ফাঁকা ক্যালোরি, যা সরাসরি গিয়ে পেটের মেদ হিসেবে জমে। নিয়মিত এগুলো খেলে আপনি যতই হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন, তেমন কোনও লাভ হবে না।
সাদা পাউরুটি ও ময়দা জাতীয় খাবার
সাদা পাউরুটি বা ময়দা দিয়ে বানানো নানরুটি, কেক, বিস্কুট—সবই খুব পরিচিত খাবার। কিন্তু এগুলোতে ফাইবার বা পুষ্টিগুণ প্রায় নেই বললেই চলে। খাওয়ার পরপরই রক্তে শর্করা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, ফলে ক্ষুধা দ্রুত ফিরে আসে। দিন শেষে খাওয়া বেড়ে যায়, আর পেটে চর্বি জমে।
ভাজাভুজি খাবার (চিপস, ফ্রাইড চিকেন, নাগেটস)
একটু অবসর পেলেই মুখ চলে যায় চিপস বা ফ্রাইড কিছু খুঁজতে। এগুলোতে থাকে ট্রান্স ফ্যাট, অতিরিক্ত তেল ও ক্যালোরি—যা সরাসরি পেটের মেদ বাড়িয়ে দেয়। যদি একেবারে ছাড়তে না পারেন, তাহলে অন্তত বেকড বা এয়ার ফ্রাইড ভার্সন বেছে নিন।
অ্যালকোহল
অনেকে ভাবেন একটু একটু খেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু অ্যালকোহল শরীরের মেটাবলিজম কমিয়ে দেয়, মানে যেটুকু খাবার খাচ্ছেন সেটাও শরীর ঠিকমতো পাচন করতে পারে না। উপরন্তু, অ্যালকোহল ক্ষুধা বাড়ায়—আর সেই সুযোগে আবারও অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে যায়, যা পেটে চর্বি জমায়।
প্রক্রিয়াজাত মাংস (সসেজ, বেকন, হ্যাম)
এইসব মাংসে থাকে অতিরিক্ত সোডিয়াম ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। পেট ফুলে যায়, ফ্যাট জমে, আর দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ে। তাই হ্যাম স্যান্ডউইচের বদলে ঘরেই রান্না করা ফ্রেশ মাংস বেছে নিন।
প্যাকেটজাত স্ন্যাকস ও মিষ্টি খাবার
কুকিজ, পেস্ট্রি এসব—দেখতেই মন ভালো হয়ে যায়, কিন্তু এগুলোর ভেতরে থাকে ট্রান্স ফ্যাট, চিনি, আর একগাদা প্রিজারভেটিভ। এইসব খাবার বেশি খেলে শরীরে ক্যালোরি যুক্ত হয় আর সেই অতিরিক্ত ক্যালোরিই গিয়ে পেটে জমা হয় মেদ হিসেবে।
পেটের মেদ কমিয়ে ফেলতে ডায়েটে যোগ করুন ৫টি খাবার
বাদাম
ভাবছেন বাদাম কীভাবে ওজন কমাবে? বাদামের স্নেহ জাতীয় পদার্থ শরীরের জন্য অনেক উপকারী। বাদাম ক্ষুধাভাব কমাতে হেল্প করে আর হার্ট ডিজিজ, হাই ব্লাড প্রেশার, এমনকি ক্যান্সার প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আমন্ড, পেস্তা কিংবা চীনাবাদাম সবগুলোই শরীরের জন্য উপকারী। সালাদে কিংবা রান্নায়ও বাদাম ব্যবহার করতে পারেন। তবে সল্টেড নাটস রেগুলার খাওয়া উচিত না।
গ্রিন ভেজিটেবল
আপনাকে বেছে নিতে হবে এমন খাবার যেটাতে ক্যালোরি কম থাকবে, পাশাপাশি ফাইবার বেশি থাকবে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার আপনার পরিপাকতন্ত্র (Digestive system) কে ভালো রাখে এবং পেটের বাড়তি মেদ কমাতে সাহায্য করে। শসা, পালংশাক, সবুজ শাক, ঢেঁড়স, লাউ, ক্যাপসিকাম এগুলো আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন।
ডিম
ওয়েট লসের ডায়েটে ডিম অবশ্যই রাখবেন কারণ এগ প্রোটিন আমাদের পেটের মেদ কমানোর সাথে সাথে শরীর সুগঠিত রাখে। ডিমে মোটামুটি ৭৮ ক্যালোরি থাকে। হাই নিউট্রিশনাল ভ্যালু (High Nutritional Value) ও প্রোটিনের জন্য ডায়েটিশিয়ানরা ডিম খেতে বলেন। সিদ্ধ ডিম আপনার সকালের নাস্তায় রাখতে পারেন। তেলে ভেজে খেলে সাথে কিছু ক্যালোরি অ্যাড হয়। তাই বয়েলড এগ আপনার জন্য বেস্ট অপশন।
পিনাট বাটার
পিনাট বাটার ফ্যাটযুক্ত হলেও কোলেস্টেরল কম থাকায় ওয়েট লসের জন্য এটি ডায়েটিশিয়ানরা সাজেস্ট করেন। ন্যাচারাল সুইটনেস আর ডিলিশিয়াস ফ্লেবার ছাড়াও পিনাট বাটারের কিছু বিশেষত্ব আছে। যেমন আপনি কিন্তু সুগার ছাড়াই প্রোটিন ও ফাইবার পাবেন, একই সাথে ফোলেট (Folate), ভিটামিন বি, জিংক (zinc) সহ আরও অনেক পুষ্টি উপাদান ইনটেক করবেন। এটি হার্ট ভালো রাখে, রেস্পিরেটরি অরগান অ্যাকটিভ (Respiratory organ) রাখে, সেই সাথে ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।
প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন
ওজন নিয়ন্ত্রণে প্রাণীজ প্রোটিনের মধ্যে সি-ফুড, চিকেন, দুধ অ্যাড করতে পারেন আর উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের মধ্যে আছে বিভিন্ন রকমের ডাল, বিনস। শরীরের ইম্যুনিটি (Immunity) ঠিক রাখে, পেশী সুগঠিত করে, চুল ও ত্বক ভালো রাখে, সেলস রিপেয়ারে সাহায্য করে, আরও কত কী! প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমিত পরিমাণে প্রোটিন রাখুন এবং কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ কমিয়ে ফেলুন।
শেষ কথা
পেটের মেদ কমাতে চাইলে প্রথমেই চাই খাবার নিয়ে সচেতনতা। ব্যায়াম তো আছেই, কিন্তু তার আগে দরকার—খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন। আজ থেকেই যদি এই ৬টা খাবার বাদ দেন, তবেই আপনি বুঝবেন পেট ধীরে ধীরে হালকা হচ্ছে। সাথে প্রচুর পানি খান, ঘুম ঠিক রাখুন, আর হালকা হাঁটা শুরু করুন; দেখবেন নিজেকে ভালোবাসছেন আরো বেশি।